ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে চীনা ঋণ ৯ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। সুদে-আসলে এই ঋণ ডলারে পরিশোধ করতে হবে চীনকে। ফলে ভৌত অবকাঠামোগত কাজ শুরুর আগেই নতুন করে ৬৫১ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার টাকা ব্যয় বাড়ছে এ প্রকল্পে। ২০১৭ সালে যখন প্রকল্পটি পাস হয় তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ দশমিক ৭০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮৯ টাকা। ব্যয়ের পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ছে আরও দুই বছর।
মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। নতুন করে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি সেপ্টেম্বর ২০১৭ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে সম্পন্ন হওয়ার কথা। নতুন করে মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে জুন ২০২৪ নাগাদ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
বুধবার (১ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হবে।
পরিকল্পনা ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। মূলত ডলারের দাম বাড়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া চীন থেকে যে পরিমাণে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাতে হিসাবের একটু ভুল ছিল। চীন যে পরিমাণে ঋণ দেওয়ার কথা তা দিচ্ছে। বাড়তি ব্যয়টা সরকারকে মেটাতে হবে। এছাড়া করোনা সংকটসহ নানা কারণে কাজের ধীরগতি ছিল।’
৬৫১ কোটি টাকা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রকল্পটি যখন ২০১৭ সালে পাস হয় তখন ডলারের দাম অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন ডলারের দাম অনেক বেড়েছে। চীন থেকে আমরা যে ঋণ নিচ্ছি তা ডলারে পরিশোধ করতে হবে। এসব কারণেই মূলত প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।’
প্রকল্পে চীনা ঋণ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ধরে নিয়ে ছিলাম চীন বাড়তি ঋণ দেবে। কিন্তু বাড়তি ঋণ দিচ্ছে না। এসব কারণেই প্রকল্পে বাড়ছে সরকারি ব্যয়।’
প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কোভিডের কারণে আমরা অনেক কাজ করতে পারিনি। চীন থেকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আসতে পারেনি। এছাড়া চুক্তিও অনেক দেরিতে হয়েছে। এসব কারণেই মূলত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে। তবে আমরা আশা করছি জুন ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হবে।’
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৭ সালে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার যানজট নিরসনে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে চীনের ঋণ পেতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পটির কাজ শুরু হতে দেরি হয়। মূল প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৯৫১ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং চীনা ঋণ ধরা ছিল ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৯০৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বেড়ে ৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা হচ্ছে। অন্যদিকে চীনা ঋণ ১ হাজার ২৫৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা থেকে কমে হচ্ছে ৯ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে যানজট নিরসন করা। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সফলভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সহজ সংযোগ স্থাপিত হবে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও হবে যানজটমুক্ত। পাশাপাশি যানজটমুক্ত হবে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা এলাকা।