কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে ভাতাভোগীদের ভুল সংশোধনের কাগজের স্তূপ। প্রতিদিন ভাতাপ্রত্যাশী বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের ভিড়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তায় অযত্ন-অবহেলায় ধুঁকছে প্রতিষ্ঠান। ভাতার টাকা নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ তো আছেই। সেবার বিপরীতে দু’একজন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ’দারোগাগিরি’ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আছে নাম্বার পরিবর্তন করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।
শত শত ভাতাভোগীর বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে যাচ্ছে ভুতুড়ে অ্যাকাউন্টে। অনেকের টাকাই অজান্তেই অ্যাকাউন্ট থেকে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল জালিয়াতিতে হতবাক সবাই। নাজেহাল হচ্ছেন বিভাগের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র এ উপজেলার অসহায় মানুষগুলো। তবে কর্মকর্তাদের অভিযোগ- আবেদন যাদের মাধ্যমে করা হয়েছে তারা নাম্বার ভুল বা পরিবর্তন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, দশমিনায় তালিকাভুক্ত বয়স্ক ৮ হাজার ৩৬৪, বিধাব ৪ হাজার ১৪, প্রতিবন্ধী ২ হাজার ২৬৮, শিক্ষাবৃত্তি ১০ ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বিশেষ ১০৭ জন ভাতাভোগী রয়েছেন।
সরেজমিন উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে কথা হলে ভাতাভোগীরা অভিযোগ করেন, দিনের পর দিন ঘুরেও ভাতার টাকা পাচ্ছন না তারা। দূর-দূরান্ত থেকে এসে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সমাজসেবা কার্যালয়ে দিনভর দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। তাদের দাবি- তাদের কাঙ্ক্ষিত টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা না হয়ে জমা হচ্ছে ভুতুড়ে অ্যাকাউন্টে। সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদাসীনতার কারণেই তাদের এই দুর্ভোগ বলে অভিযোগ তাদের।
দশমিনা সদরের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী মো. নাসির উদ্দিন জানান, ভাতাভোগীদের অ্যাকাউন্টের পিন সেট করা যায় না। আবার তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা এলে ভাতাভোগীরা কোনো এজেন্টের দোকানে না গেলেও বিভিন্ন এজেন্ট নাম্বারের মাধ্যমে অদৃশ্যভাবে উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়া হয়। আগে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিলেও এখন নিজের অজান্তেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এজেন্ট অ্যাকাউন্ট নাম্বারে চলে যাচ্ছে টাকা। যেটা রহস্যজনক বলে তার ভাষায় তিনি জানান।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসে সেবা নিতে আসা সাইফুল ইসলাম, বেল্লাল ও রাজি বিবিসহ অনেকে জানান, ভাতার জন্য নামসহ নগদ নাম্বার দেওয়ার দীর্ঘ মাস পরও তারা পাননি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের টাকা অন্য নাম্বারে চলে যাচ্ছে। কোন অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে তারা জানেন না। তাই তারা বলছেন ভুতুড়ে অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে টাকা। তারা যে নাম্বার দিয়েছেন সে নাম্বার এন্ট্রি করেনি সমাজসেবা অধিদপ্তর ও তাদের মাধ্যমে আবেদন করেছেন তারা। সমাজসেবা অফিসের লোকজন ও যাদের মাধ্যমে ভাতার আবেদন করেছেন তারা নাম্বার পরিবর্তন করে টাকা আত্মসাৎ করছে বলে দাবি করেন তারা।
এ বিষয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অফিস সংশ্লিষ্ট কেউ ভুল বা নাম্বার পরিবর্তন করে টাকা আত্মসাৎ করছেন না। আবেদন যাদের মাধ্যমে করা হয়েছে, তারা নাম্বার ভুল বা পরিবর্তন করেছেন। দশমিনা সমাজসেবা অফিসে নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাই এখন আর সেবা পেতে ভোগান্তি হচ্ছে না। মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল-হেলাল বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে খুব দ্রুত এ বিষয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যারা ভাতাভোগী তারা নিঃস্ব প্রকৃতির লোক। তারা যাতে ভাতার টাকা সঠিকভাবে পান সে বিষয় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।