দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুর্নীতি আর লুটপাটের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। কোথাও এ অপকর্ম করছেন পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ অন্য সদস্যরা। আবার কোথাও অধ্যক্ষসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উভয় ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরা পাহারাদারের ভূমিকায় থাকেন।
লুটেরা শিক্ষক ও কমিটির সদস্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এর প্রতিবাদ করতে পারেন এমন শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করতে শোকজ, বেতন বন্ধ, বরখাস্তের মতো পথ বেছে নেওয়া হয়। দুর্নীতির কারণে আজ পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি বা সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। লুটপাটের টাকা ফেরত দেওয়ারও নজির নেই। আর পর্ষদ পক্ষে থাকলে অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককেও ন্যূনতম বেকায়দায়ও পড়তে হয় না। যুগান্তরের অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক সময়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রধান উপায় ছিল শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, ভর্তি-বাণিজ্য। টিউশন ও অন্যান্য ফি, খাতা-কলম-কাগজ এবং স্কুল ড্রেস-ডায়েরি ইত্যাদি বিক্রির টাকাও তছরুফ হতো। এছাড়া অবৈধ ও নিুমানের গ্রন্থ পাঠ্যভুক্তির বিনিময়ে প্রকাশকদের কাছ থেকে কমিশন আদায়। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা চালুর পর জাল সনদে চাকরি ও ভুয়া এমপিওভুক্তি বড় ব্যবসায় পরিণত হয়।
হালে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি-গাড়ি ক্রয়, ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কাজের নামে অর্থ লুটের প্রবণতা। প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রি ও স্থাপনা দখল করে নেওয়ার ঘটনাও বের হচ্ছে। অবিশ্বাস্য হারে ‘সিটিং অ্যালাউন্স’ গ্রহণও আরেকটি বড় খাত। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের গচ্ছিত অর্থ এ ব্যাংক থেকে ও ব্যাংকে এফডিআর করে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ আসছে প্রায়ই।
অসাধু শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের জিম্মি করে কোচিং-প্রাইভেটে বাধ্য করে আসছেন বহুদিন ধরে। এই কোচিংবাজদের ‘সুরক্ষা’র বিনিময়ে কমিটি ও অসাধু নেতা-শিক্ষকরা বখরা নেন। প্রতিষ্ঠানের টাকা ব্যক্তির নামে খোলা হিসাবে রাখার অভিযোগও আসছে।
ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানেই তারা পরিদর্শন ও তদন্ত করে থাকেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, এক সময় সেবার মানসিকতা নিয়ে শিক্ষানুরাগীরা কমিটিতে আসলেও এখন চিত্র পালটে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার চেয়ে আর্থিক কর্মকাণ্ডের প্রতি আগ্রহ বেশি দেখায়। এই দুপক্ষের সঙ্গে অসাধু শিক্ষকরা যুক্ত হয়ে সিন্ডিকেট গড়ে অন্যায় অনিয়ম করে থাকে। একা সভাপতির পক্ষে যেমন অনিয়ম করা সম্ভব নয়, আবার অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকও একা পারবেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় লুটপাটের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রধান কারণ বিচারহীনতা। তদন্তে প্রায়ই বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। কিন্তু চিহ্নিত ‘রুই-কাতলা’দের কোনো শাস্তি হয় না। আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব কমিটিতে বসতেন বিএনপি-জামায়াতের নেতারা। তখন থেকেই স্থানীয় সংসদ-সদস্যদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ আছে এসব প্রতিষ্ঠানে। কোথাও তারা নিজেরা সভাপতি, আবার কোথাও তার মনোনীতরা। স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের সদস্যরাও পরিচালনা কমিটিতে যেতেন।
বর্তমানে তাদের স্থলে এসেছেন সরকার সমর্থকরা। ২০০৯ সালের পর সংসদ-সদস্যরা সভাপতি হতেন। ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতে এক মামলার রায়ে তাদের সভাপতি হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়। এখন তাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মনোনয়নে দলীয় নেতাকর্মী, পরিবারের সদস্য কিংবা ঘনিষ্ঠজনেরা সভাপতি ও সদস্য হচ্ছেন। সরকারপন্থি বা সমর্থক ছাড়া এসব কমিটিতে অভিভাবক এবং শিক্ষক প্রতিনিধি হওয়ার রাস্তাও অনেকটাই বন্ধ।
জানা গেছে, মাঝে মধ্যেই বড় দুর্নীতি, কাউকে বরখাস্ত বা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। এসব ঘটনার পরই দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে। তবে এরপরও অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত হয় না। অনেক সময়ে তদন্তও আটকে যায়। সম্প্রতি রাজধানীর একটি কলেজে তদন্তের উদ্যোগ নেয় ডিআইএ। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের অনুরোধে সংস্থাটি পিছিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে বলে সূত্র জানায়। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ আছে। অনেক সময় তদন্ত প্রতিবেদন বছরের পর বছর ফাইলবন্দি থাকে।
ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বা আত্মপক্ষ সমর্থনের নামে কিছু প্রতিবেদন উলটে দিয়ে অপরাধীকে মাফ করে দেওয়ার অভিযোগও আছে। কখনো যদি মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেয়ও, পরিচালনা কমিটি না চাইলে অপরাধীর সাজা হয় না। আবার কমিটি চাইলেও আইনি আশ্রয়ের নামে তদন্ত বা ব্যবস্থার ফাঁক খোঁজার চেষ্টা করা হয়। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টাকা একবার পেটে চলে গেলে তা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে ফিরে আসার নজির খুব একটা নেই।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হক যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয়ভাবে এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলো দেওয়ার জন্য একসময়ে বেসরকারিভাবে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কমিটির প্রয়োজন ছিল। তখন সত্যিকার অর্থে শিক্ষানুরাগী এবং যারা দান করতেন তারাই এসব কমিটিতে আসতেন। এখন কমিটির পদ লাভজনক ও লোভনীয় হয়ে উঠেছে বলে প্রায়ই অভিযোগ আসছে। প্রতিষ্ঠান যত বড়, তত বড় দুর্নীতি। আর দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতি করে কমিটির কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না। অপরদিকে কমিটি পক্ষে থাকলে অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরাও রেহাই পেয়ে যান।
দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ৩৭ হাজার। এরমধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ১৬৪টি। এছাড়া প্রায় ১ হাজার সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানেই দুর্নীতির ঘটনা আছে। লুটপাটের বেশিরভাগ অভিযোগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সভাপতিসহ পর্ষদকে বিধিমালায় একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতার জোরেই তাদের অনেকেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
শিক্ষকরা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে আগে অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককে বোঝানো হলেও বর্তমানে কমিটিই সব। আবার প্রতিষ্ঠান প্রধান এর আয়-ব্যয় কর্মকর্তা। ফলে সভাপতিসহ কমিটির সদস্যরা স্কুল-কলেজে দুর্নীতির করলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হয়। কেননা, পর্ষদের হাতে তাদের চাকরি থাকা-না থাকা নির্ভর করে, তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের রাজি না হয়ে উপায় থাকে না। অন্যদিকে বিধিমালায় সভাপতি-সদস্য বা পর্ষদকে কর্মকাণ্ডের দায় থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তি বলতে সর্বোচ্চ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। আইনে ধরার রাস্তা না থাকায় দুর্নীতিবাজ পর্ষদ ও সিন্ডিকেটের সাধারণ শিক্ষকরা বেপরোয়া। প্রতিষ্ঠানের সেবার পরিবর্তে বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটই যেন তাদের নেশা।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম নিয়ে গত বছর সেপ্টেম্বরে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে দুর্নীতির নানা তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রতিবেদনের একটি অংশে স্কুল-কলেজে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুস বাণিজ্যের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই টাকা দিতে হয় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পরিচালনা কমিটিকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা ডিআইএর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩১৬ দশমিক ৬৯৮৬৮ একর জমি বেহাত হয়ে গেছে। দেশের ৮৯৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলাদা দুই সময়ে পরিদর্শন করে সংস্থাটি এই চিত্র পেয়েছে। এসব জমির কোনোটি পরিচালনা কমিটি আর শিক্ষকরা মিলে বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কোনোটি নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৪৮ কোটি টাকার বেশি লুট হয়েছে।
লুটপাটের খণ্ডচিত্র : এই মুহূর্তে রাজধানীর নামি প্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি আইডিয়াল, রামপুরার একরামুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তদন্ত চলছে। কিছুদিন আগে শেষ হয়েছে ভিকারুননিসা নূন, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল, শেখ বোরহানুদ্দীন, মিরপুরের শাহআলী স্কুল ও শাহআলী কলেজ ও মিরপুর কলেজের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত।
মতিঝিল আইডিয়ালে এক সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বছরের পর বছর ধরে সভাপতি । বিপরীত দিকে প্রতিষ্ঠানটিতে টানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও আসছে। গত এক দশকে এই প্রতিষ্ঠানে মোট তিনবার তদন্ত হয়েছে। বর্তমানে ডিআইএর একটি টিম তদন্ত করছে। এর আগে দুবারের তদন্তে ভর্তিবাণিজ্য, শিক্ষক নিয়োগে সরকারি নিয়ম না মানা, শিক্ষকদের বেপরোয়া কোচিং বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
অনিয়মের দায়ে ও আদালতের মামলার রায়ে ২৩ জুন এই প্রতিষ্ঠানের পর্ষদের ২ জানুয়ারি থেকে পরের ৬ মাসের কার্যক্রম স্থগিত করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এ প্রতিষ্ঠানের বিদায়ী অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এ প্রতিষ্ঠানের আতিকুর রহমান নামের এক কর্মচারীর বিষয়েও দুদক তদন্ত করছে। এই কর্মচারীর সঙ্গে অধ্যক্ষের ছেলে ডেভেলপার কোম্পানি খুলেছেন বলে অভিযোগ আছে।
এই মুহূর্তে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষহ সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুই সংস্থা কাজ করছে। গত অর্ধযুগ ধরে স্থানীয় সংসদ-সদস্যের কন্যা জিবির সভাপতি পদে আছেন। শতভাগ কব্জায় নিতে ট্রাস্ট খোলা আর এমপিও হস্তান্তরের মতো পথে আছে প্রতিষ্ঠানটি। এনিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছেন। তাদের দাবি, গত একযুগে অন্তত শত কোটি টাকা লুট হয়েছে। এ নিয়ে ৫২ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ ডিআইএ, মাউশি ও ঢাকা বোর্ডে জমা পড়েছে। ডিআইএ ও মাউশি আলাদাভাবে তদন্ত করছে।
রাজধানীর মিরপুর কলেজে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে ডিআইএ। সংস্থাটি অর্থ আত্মসাৎসহ ৩৪টি অভিযোগের প্রমাণ পায়। এরপর ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদকে পরিচালনা কমিটি (জিবি) বরখাস্ত করে। এছাড়া তার এমপিও বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার জন্য জিবিকে বলা হয়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনুরোধ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিভ্রান্তিকর চিঠি দেয় অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদকে। সেই চিঠি নিয়ে ২৫ জুন ওই অধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ স্থানীয় সরকার দলীয় কয়েকটি সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে কলেজে ফিরে যান ও বলপূর্বক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় কলেজটিতে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগে দুর্নীতি, প্যাটার্নবহির্ভূত শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ আছে। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, আয়-ব্যয়ের হিসাবের নথিপত্র না রাখা, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে প্রথম শ্রেণির বেতন-ভাতা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০০৭ সালে ডিআইএর এক তদন্তে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতি ধরা পড়ে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনিয়ম বা অপচয়ের মাধ্যমে ক্ষতি ৪৮ কোটি ৩৩ লাখের বেশি টাকা আদায়ের সুপারিশ করেছে ডিআইএ।
২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরিচালনা কমিটির সদস্য, অধ্যক্ষ এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রায় ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ‘সম্মানি’ হিসাবে নিয়েছেন। এই টাকার বিপরীতে ২ কোটি ১৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। সর্বশেষ জুনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মাউশির ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ারুল ইসলাম।
ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজে ৪ জুন আন্দোলনে নামেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। তাদের আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ এবং তার সিন্ডিকেটের তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে জিবি। রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে গভর্নিং বডি ও বিভিন্ন নামে গঠিত কমিটি তিন অর্থবছরে সম্মানির নামে ২০ লাখ ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। সেখানে এক মিটিং করলেই ব্যয় হতো ১ লাখ টাকা। এছাড়া সভাপতি কলেজে এলেই ৩ হাজার টাকা করে নিতেন। রাজধানীর মনিজা রহমান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
মিরপুরের শাহআলী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও এ সংস্থাটি তদন্ত করেছে। নিয়োগে ত্রুটি, স্কুলের জায়গায় একটি ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে মার্কেট নির্মাণসহ নানা অভিযোগ আছে। রামপুরার একরামুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে স্কুল ভবনের ওপর বাসভবন নির্মাণসহ ১৯টি পয়েন্টে ৪ পৃষ্ঠার অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। মহাখালীর আইপিএইচ স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরিচালনা কমিটির (জিবি) এক সভাপতি প্রতিষ্ঠানের ২৫ লাখ টাকার এফডিআর ভেঙে খরচ করেন। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করে পরিচালনা কমিটির আরেক নারী সদস্য পুলিশি হয়রানির মুখে পড়েন।
দনিয়া কলেজে বিভিন্ন সময়ে ৪১ কোটি ৪০ লাখ ৯৪ হাজার টাকার অনিয়ম পেয়েছে ডিআইএ। যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি বের করেছে সংস্থাটি। রাজশাহী মসজিদ মিশন স্কুলের টাকা অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। এছাড়া আরও কিছু বিষয় তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৩ বছর আগে প্রতিবেদন দেয় ডিআইএ। ওই প্রতিবেদনের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানে না তদন্তকারী সংস্থা।