ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) কারচুপির সুযোগ থাকার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রি.জে. (অব.) আহসান হাবিব খান। তিনি বলেছেন, চ্যালেঞ্জ যদি করতেই হয় সংবাদ সম্মেলনে কেন? আমাদের কাছে এসে চ্যালেঞ্জ করতে অসুবিধা কী?
বুধবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সুজন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, ইভিএমের অডিট কার্ড পরিবর্তন করে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়া সম্ভব। এছাড়া আঙ্গুলের ছাপ না মিললে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ওভাররাইট করে ব্যালট ইউনিট ওপেন করার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা ইভিএম নিয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি, রাজনৈতিক দলের টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বসেছি। তাদেরও ডেকেছি। তারা কিন্তু আসেননি। আমরা পাঁচ মাস ধরে সময় দিয়েছি। কেন হঠাৎ করে এই সংবাদ সম্মেলন, উদ্দেশ্যটা কী?
তিনি বলেন, তাদের জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা। তারা একদিন না দশদিন আসবে, ভীতি কোথায়? চ্যালেঞ্জ যদি করতেই হয়, সংবাদ সম্মেলনে কেন চ্যালেঞ্জ? আমাদের এখানে এসে চ্যালেঞ্জ করুক। তারা আমাদের চেয়ে অনেক শিক্ষিত, অনেক বড়। কাজেই আমাদের এখানে এসে চ্যালেঞ্জ করতে অসুবিধা কী?
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার চার শ টা নির্বাচন করলাম। কয়জন মারা গেছে? কয়টা জায়গায় অরাজকতা হয়েছে? অনিয়ম হলে সেটা তুলে ধরেন— অসুবিধা নাই। অসততা, অসচ্ছতা, পক্ষপাতিত্ব যদি চোখে পড়ে, প্লিজ লেট মি নো। আমাকে জানান, তার প্রতিকার— জবাব দিয়ে তৃপ্ত করে ছাড়বো। কাজ করতে গেলে ভুল হতে পারে। তবে দেখবেন ইচ্ছাকৃত ভুল হলো কি-না। কাজ করতে গেলে— একটা ইচ্ছাকৃত ভুল, আরেকটা হয় অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমাকে পর্যবেক্ষণ করেন।
জনগণের আস্থা অবশ্যই আসবে উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, দলগুলোর যে অনাস্থা এটা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আসতে পারে। অতীত থেকে আমরা শিক্ষা নেবো। কিন্তু ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে, এটা গ্যারান্টেড। আপনারাও বুঝতে পারবেন। সামনের সিটি, গাইবান্ধার উপ-নির্বাচনসহ যেখানে ইভিএম হবে সেখানেই ভোটাররা বলবে ইভিএমই ভাল। সেই কারণ তখন আর থাকবে না। আমরা ঈমানের সঙ্গে কাজ করে যাবো। সঠিক কাজ করে যাবো। ক্ষমা চাইবো না। ভুল করলে শুধরে নেবো।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের অনেকেই থাকে যারা সংকট তৈরি করতে চায়। ঘোলাভাবে শিকার করতে চায়। সরকার থেকে এবং বিরোধী দল থেকে অনেকেই ইভিএম চাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আমাকে ইভিএম দিয়েন না, আমার এলাকার অশিক্ষিত মানুষ বেশি এমনও বলছে। বিদেশের সন্তানের সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে যদি কথা বলতে পারে— দু’টো বোতাম চাপতে পারবে না? কাজেই এটা অসৎ উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, আঙ্গুলের ছাপ না মিললেও যখন নম্বরটা দেওয়া হয়, তখন কিন্তু ভোটারের পরিচয় মেলে। আঙ্গুলের ছাপ না মিললে ওভাররাইট করলে সেটা কিন্তু সংরক্ষিত থাকছে। আমরা অনেক সময় সেটা নিয়ে ভিডিও কলে কথা বলি। নির্বাচনে প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের চলতে হবে। বিকাশ, রকেট, ইউপে, নগদ; জুম অ্যাপ বিশ্বব্যাপী চলছে। কাজেই আমাদের কাছে আসেন, দেখেন। অনেক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ তারা। তাদের সন্দেহ থাকলে কাছে আসেন, দেখেন। প্রত্যেকটা পর্বে পর্বে আমরা ইভিএম দেখার ব্যবস্থা করেছি, তাদের থাকতে বলেছি।
আহসান হাবিব বলেন, কারচুপির প্রমাণ করতে পারলে আমরা তখন সিদ্ধান্ত দেবো। হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান নয়, কাজেই কারও অসৎ উদ্দেশ থাকতেও পারে।
নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার প্রশ্নে তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা দিয়ে নির্বাচন করার বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো যুক্তিসঙ্গত কারণেই দলগুলো এই বিষয়টি উত্থাপন করেছে। এটা কেন সেটা আমাদের আরও জানতে হবে। আমরা শিক্ষাবিদ, গুণীজনসহ ধাপে ধাপে যে সংলাপ করেছি এতে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। ভালো-মন্দ তো সব জায়গায় আছে। যারা সততার সঙ্গে কাজ করবে তাদেরই আমরা নেবো। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাও থাকবে। যারা সততার সাথে, ইমানের সাথে কাজ করে যাচাই-বাছাই করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা যোগ্য-চৌকস কর্মকর্তাদের নেবো। আমরা এ ব্যাপারে খুব চিন্তিত।