শনিবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
TableTalkUK
  1. ক্রাইম সিন
  2. খেলাধুলা
  3. জেলার খবর
  4. তথ্য-প্রযুক্তি
  5. প্রবাসের কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. ব্যাবসা-বাণিজ্য
  8. ভিডিও সংলাপ
  9. মিডিয়া
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সকল সংবাদ

মৃত সবাই বরগুনার, আজ গণকবর

প্রতিবেদক
ukadmin
ডিসেম্বর ২৫, ২০২১ ৪:০৩ পূর্বাহ্ণ

শীতের বাতাস কেটে মাঝনদীতে তরতর করে এগিয়ে যাওয়া লঞ্চটিতে বেশির ভাগ যাত্রী তখন ঘুমিয়ে। রাত ৩টার কিছু পর হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচি। kalerkanthoএকই সঙ্গে ধোঁয়ার গন্ধ নাকে এসে লাগছে। আগুন। পড়িমড়ি করে উঠে যাত্রীদের দিগভ্রান্ত ছোটাছুটি শুরু হয়। কোন দিকে গেলে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবু বাঁচার যেন পথ নেই। প্রাণ বাঁচাতে কিছু না ভেবেই তাঁদের অনেকে মাঝনদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রিয়জন, সহযাত্রীদের না পেয়ে আর্তচিৎকার করতে থাকেন অনেকে। ঘুম থেকে উঠে ভয়ংকর এক বিভীষিকায় দিশাহারা সব যাত্রী। সুগন্ধা নদীর বুকে রাতের আকাশ লাল করে জ্বলে উঠতে থাকে লঞ্চটি।

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের তিনতলা লঞ্চটি এভাবেই ঘণ্টাখানেক চলে নদীর এক পারে গিয়ে থামে। ততক্ষণে আগুন কেড়ে নিয়েছে শিশু, নারীসহ অন্তত ৩৫ জনের প্রাণ। দগ্ধ হয়ে, লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন শতাধিক। দগ্ধদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পরে মারা গেছে আরো তিনজন। নিহতদের সবার বাড়ি বরগুনা বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন ধরে। পরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় লঞ্চটি ভেড়ানো হয়। রাতের আঁধারে নিজেরাই ঝাঁপিয়ে পড়ে যাঁরা প্রাণ বাঁচিয়েছেন তাঁদের বেশির ভাগই আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। ভোররাতে স্থানীয় বাসিন্দারা নৌকা নিয়ে তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

গতকাল সেখানে স্বজন হারানো শত শত মানুষ ভিড় করে আহাজারি করেন। লাশের গন্ধ আর আহাজারিতে শোকের মরুতে পরিণত হয় সুগন্ধার তীর। দিনভর উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড ৩৫ জনের লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি ৭২ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী, শিশু ও প্রবীণ। দগ্ধ হয়ে লাশ বিকৃত ও খণ্ডিত হওয়ায় স্বজনরা নিহতদের শনাক্ত করতে পারছেন না।

গতকাল রাত পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনের লাশ শনাক্ত করা গেছে। বাকি লাশগুলো শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরে লাশগুলো গণকবরে দাফন করা হবে। স্বজনদের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেল পর্যন্ত অর্ধশত যাত্রী নিখোঁজ ছিলেন।

আহত ও দগ্ধদের মধ্যে ৭০ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এখন ৫৩ জন চিকিৎসাধীন। ঝালকাঠিতে ১৫ জন চিকিৎসাধীন। গতকাল রাত পর্যন্ত ১৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন হাবিব খানকে (৪৫) রাতে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকায় আনার পথে মাহিনুর আক্তার (৭) নামের এক শিশু মারা যায়। এ ছাড়া শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারজিয়া আক্তার (১০) নামের আরেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

এটিই দেশে প্রথম ঘটনা যেখানে চলন্ত লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে এত মানুষের প্রাণহানি ঘটল। লঞ্চটিতে ৪০০ যাত্রী থাকার কথা কর্তৃপক্ষ বললেও প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলছেন, গাদাগাদি করে আট শতাধিক যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডে লঞ্চটিকে দ্রুত তীরে ভেড়ানোসহ যাত্রীদের রক্ষায় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, নিচতলার পেছনের ইঞ্জিনরুম বা ক্যান্টিন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ইঞ্জিনরুমে রাখা ডিজেল আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। তবে লঞ্চের আগুন এত বড় আকার ধারণ করার পেছনে রহস্য দেখছেন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ঝালকাঠি জেলার প্রশাসক মো. জহুর আলী রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা ৩৭টি লাশ উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে চারজনের পরিচয় জানা গেছে। রাতেই ঝালকাঠি পৌরসভার একটি ট্রাকে সব লাশ বরগুনায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, আগামীকাল (আজ) দুপুর পর্যন্ত ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরে গণকবরে লাশগুলো দাফন করা হবে।

গতকাল বিকেলে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটি পরিদর্শনে গিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আগুনে পুরো একটি লঞ্চ পুড়ে যাওয়ার পেছনে কোনো রহস্য থাকতে পারে। নয়তো এ রকম দ্বিতীয় ঘটনা আর বাংলাদেশে ঘটেনি। নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ - বাংলাদেশ