রিজার্ভ কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের অর্থনীতি। পাকিস্তানের গৌরবখ্যাত তুলা বুনন শিল্পের অবস্থাও শোচনীয়। এ শিল্পে নিয়োজিত অসংখ্য কর্মী হারিয়েছেন চাকরি। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। আর সবকিছু মিলিয়ে এখন পাকিস্তানজুড়ে চলছে হাহাকার।
বিশ্বের অন্যতম বড় টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনকারী দেশ পাকিস্তান ২০২১ সালে ১৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। যা মোট রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি ছিল।
কিন্তু ছোট টেক্সটাইল ও টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনকারী অসংখ্য কারখানা, যেগুলো বিছানার চাদর, তোয়ালে এবং ডেনিম ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করতো সেগুলো তুলার অপ্রতুলতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া টেক্সটাইল শিল্পে কর বৃদ্ধির বিষয়টিও মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এসেছে।
রিজার্ভ সংকটের কারণে এখন টেক্সটাইল পণ্যের কাঁচামাল, চিকিৎসা সামগ্রী এবং খাদ্যপণ্য আটকে আছে করাচি পোর্টে ।
পাকিস্তান টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্যে অনুযায়ী, এ শিল্পে নিয়োজিত ৭০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। গত বছর পুরো পাকিস্তানজুড়ে বিধ্বংসী যে বন্যা হয়েছিল সেটির কারণে বেশিরভাগ তুলা শস্য নষ্ট হয়ে গেছে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সপ্তাহে জানায়, বিদেশি রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৪ সালের পর যা সর্বনিম্ন। যার প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে সৌদি আরব। তবে এ অর্থ ব্যবহার করা যাবে না। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের পণ্য আমদানি করতে পারবে ইসলামাবাদ।
এছাড়া সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে বহুলাংশে। গত শনিবার সিন্ধ প্রদেশের মিরপুর খাস নামক একটি স্থানে কমমূল্যের আটা কিনতে গিয়ে মানুষের নিচে চাপা পড়ে হারিসং কোলহি নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারান। তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ৬০ রুপি দরে ৫ কেজি আটা কিনতে গিয়েছিলেন। সাধারণ বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি আটা ১৩০ থেকে ১৪০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।
সিন্ধ প্রদেশের এই ঘটনা পাকিস্তানের আসন্ন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের একটি মাত্র উদাহরণ। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ার বিরূপ প্রভাব ইতোমধ্যেই দেশটির নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর পড়েছে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের পাকিস্তান ইনিশিয়েটিভের পরিচালক উজাইর ইউনুস বলেছেন, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এখন দ্বিগুণ। এমনকি ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার আগেও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছিল। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণ মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
ইউনুস জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে ইমরান খান ক্ষমতায় আসার আগে পূর্ববর্তী সরকার অনেক ঋণ করেছিল। এরপর এটি সামাল দিতে ২০১৯ সালে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ধর্ণা দেন ইমরান। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে এটি পিছিয়ে যায়। এরপর শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিভিন্ন ঝামেলার কারণে পাকিস্তান এ ঋণ এখনো পায়নি।
এখন ডলার ঘাটতির প্রভাব এতটাই তীব্র হয়েছে যে অতিপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীও আমদানি করতে বেগ পেতে হচ্ছে ইসলামাবাদকে। এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ ওষুধও পাবেন না।
কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের ওপর জলবায়ুর প্রভাব নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। সেখানে দেশটিকে ১০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নত দেশগুলো। এছাড়া পাকিস্তানে নতুন সেনাপ্রধান আসিম মুনির সৌদি আরব ও আরব আমিরাত সফরে গিয়েছেন আরও ঋণ পাওয়ার জন্য।
সূত্র: ফার্স্টপোস্ট, টাইম