ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে কাওয়ালি গানের আসর বসিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী। এই অনুষ্ঠানে হামলা করে মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর এবং আয়োজক ও শিল্পীদের মারধর করেছেন আরেক দল শিক্ষার্থী।
এই হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন আয়োজকেরা। তবে ছাত্রলীগ বলেছে, শরিয়াহ ও তরিকা অনুযায়ী কাওয়ালি সহি কি না, নারীরা আসতে পারবেন কি না—এ ধরনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে বিভেদ ছিল। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে টিএসসিতে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে টিএসসির সঞ্জীব চত্বরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। কাওয়ালি ব্যান্ড ‘সিলসিলা’ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। রাত নয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলার কথা থাকলেও হামলার পর পণ্ড হয়ে গেছে।
ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আজ সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে টিএসসির সামনে তৈরি মঞ্চে পূর্বঘোষিত কাওয়ালি গানের আসর শুরু হয়। সাড়ে ছয়টার দিকে টিএসসি ভবনের ওপর কাওয়ালির আয়োজকদের সাঁটানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন একদল শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে তাঁরা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মারধর শুরু করেন, পাশাপাশি ভাঙচুর করেন অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও দর্শকদের বসার চেয়ার। এ সময় কাওয়ালি শিল্পীদেরও মারধর করা হয়। হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন।
এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন। তিনি বলেন, কাওয়ালির আয়োজনের শুরু থেকেই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। অনুষ্ঠান উপলক্ষে টিএসসি ভবনের ওপর টাঙানো ব্যানার খুলে ফেলে। পরে তাঁরা আরেকটি ব্যানার টাঙান। এই অনুষ্ঠানের জন্য টিএসসি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া ছিল। অনুষ্ঠানের জন্য যাঁর কাছ থেকে সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, তিনি হুট করে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বলেন, তিনি সেগুলো দিতে পারছেন না। পরে অন্য জায়গা থেকে সাউন্ড সিস্টেম এনে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এর মধ্যেই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার জন্য ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে দায়ী করেন আকরাম হোসাইন। তিনি বলেন, ‘এই হামলার পেছনে তাঁর ইন্ধন ছিল। হামলার সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি তাঁর কর্মীদের দিয়ে আমাদের ব্যানার খুলে ফেলেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের মঞ্চ ভেঙে ফেলেছেন, অনুষ্ঠানের চেয়ার ভাঙচুর করেন। আমাদের শিল্পীদের ওপর তাঁরা হামলা করেছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘হামলার প্রশ্নই আসে না৷ আমরা জানতে পেরেছি, এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আয়োজকদের মধ্যে নানা ধারা-উপধারা তৈরি হয়েছিল। শরিয়াহ ও তরিকা অনুযায়ী কাওয়ালি সহি কি না, নারীরা আসতে পারবেন কি না, এভাবে গান আয়োজন করা ঠিক কি না—এসব নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে একধরনের সংঘর্ষের আবহ ছিল। এরই বহিঃপ্রকাশ আজকে টিএসসিতে ঘটেছে। এর সঙ্গে যাঁরা ছাত্রলীগের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করেন, তাঁরা আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মনগড়া ও কল্পনাপ্রসূতভাবে এটি করছেন।’