একেক সময় একেক পণ্য বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। কখনো লবণ, কখনো চিনি, কখনো পেঁয়াজ। যেন পালা করে একেক পণ্যের ব্যবসায়ীরা ‘সমঝোতা’ করে নেন বা তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এবার কি তাহলে ভোজ্য তেলের ব্যবসায়ীদের পালা? তেমনটিই তো মনে হচ্ছে, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের বক্তব্যে। গত বুধবার মিল মালিক ও বাজারের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন—মিলমালিকেরা বলছেন যথেষ্ট তেল মজুত আছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক মাস ধরে অর্ডার (এসও) কেটে তেল পাচ্ছেন না, যা ১৫ দিনের মধ্যে পাওয়ার কথা। এর ফলে বাজারে দেখা দিয়েছে সয়াবিন তেলের সংকট। এমন পরিস্থিতিতে বাজার থেকে এক হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এই টাকা কে নিল তা দেখা হবে, ধরা পড়লে কেউ ছাড় পাবে না’ (দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ মার্চ)।
দেশের বাইরে একের পর এক ‘বেগমপাড়া’ গড়ে ওঠছে। যতই অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের সাফল্যে আমরা বিভোর থাকি না কেন, সংসদে ষাট শতাংশেরও বেশি সাংসদ যে ব্যবসায়ী সে কথা তো সবারই জানা আছে।
সেই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপের মতো সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি, পাইকারি ও ডিলারদের প্রতিনিধি। সেখানে তাদের পারস্পরিক দোষারোপে স্পষ্টই বোঝা যায়, ভোজ্য তেল নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। গ্রুপগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, ঠিকঠাক পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যেই পণ্য দেওয়া হচ্ছে। সরবরাহে কোথাও কোনো ঝামেলা নেই। গত তিন মাসে কোনো কোম্পানি কত টন সরবরাহ করেছে সেই ডেটাও তারা দিলেন। বরং তাঁদের কাছ থেকে পণ্য কিনে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। অন্যদিকে পাইকার ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ‘সরবরাহ ঘাটতি না থাকলে আমরা কেন মাল পাই না?’ তাঁদের আরও অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত মূল্যেও পণ্য দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি মিলে ঢুকতে ট্রাকপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করেও নেওয়া হচ্ছে। তেলের বিক্রয় আদেশ (এসও) কিনে ট্রাক নিয়ে এক কোম্পানির মিল থেকে আরেক কোম্পানির মিলে ঘুরলেও সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না তাঁরা।
সয়াবিন তেলের বাজারের আধিপত্য হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির হাতে। ফলে এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কঠিনতর কোনো ব্যাপার নয়। এরপরও সরকার সেটি পারল না কেন? উল্টো সরকারি সংস্থার কর্ণধারই দাবি করে বসলেন, বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। এখন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এই টাকাটা লোপাট করল কারা? ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতে, দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। সে অনুযায়ী তিন মাসের চাহিদা এক লাখ ৫০ হাজার টনের মতো। এখন মিল মালিকেরা বলছেন, তারা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করেছেন। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ী ও ডিলারদের ভাষ্য বলছে ভিন্ন কথা। তাহলে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে বা কোন পক্ষ? কিসের ভিত্তিতেই বা টাকা লোপাটের এই দাবি করা হলো?