বাংলাদেশের পিকে-কে নিয়ে নতুন রাজনীতির টানটান চিত্রনাট্য শুরু হতে চলেছে প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। গত পনেরো-কুড়ি বছর ধরে বাংলাদেশ ভিত্তিক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাঙ্ক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি.কে.হালদার) ও তার অন্যতম সহযোগী সুকুমার মৃধা কি করে বিপুল সম্পত্তির তৈরি করলেন এই প্রশ্নের তদন্ত করতে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফর্সমেন্ট ডিরেক্টর (ইডি)-র সাথে এবার আরেকটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’ (সিবিআই) যুক্ত হতে পারে এমনটা মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। কারণ ইডি তদন্ত করতে পারে কেবল মাত্র আর্থিক বিষয়টি, কিন্তু পি.কে.হালদারের বিষয়টি শুধুমাত্র আর্থিক নয়।
সাথে আছে ভারতে প্রবেশ, এদেশে নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তি, নাগরিক পরিচয় পত্র তৈরি ইত্যাদি। আর এসব বিষয়ে তদন্ত করতেই এর সাথে যুক্ত হতে হবে সিবিআইকে। তা নাহলে তদন্ত সম্ভব নয় এমন দাবি আইনজীবীদের। প্রকৃত নাম বদল করে শিবশংকর হালদার নামে ভারতে পরিচয় দেওয়া, এদেশের মাটিতে একাধিক জায়গায় জমি কেনা থেকে বাড়ি তৈরি করা- সেক্ষেত্রে দরকার হয় দেশটির নাগরিক পরিচয় পত্রের। কিন্তু স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা বা প্রভাবশালীর সহায়তা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। ফলে সেই তথাকথিত প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা কারা, সেই খোঁজ শুরু করবে তদন্তকারীরা। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে এই বিষয়গুলিই এই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে চলেছে। ইডির হাতে প্রশান্ত হালদার সহ ছয় জনের গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী তথা হাড়ার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এই বিষয়ে তিনি জানান “আইন আইনের পথে চলবে। এখানে কাউকে রেয়াত করা হবে না। যেই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
” যদিও প্রশান্ত কুমার হালদার বা তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় আধার কার্ড, প্যান কার্ড, বা আধার কার্ড তৈরির যে অভিযোগ উঠেছে তা মানতে চাননি বনমন্ত্রী। তিনি বলেন “আমি কোন আলটপকা মন্তব্য করতে পারিনা। আমি তথ্য জেনে তারপর মন্তব্য করতে পারি। কারণ আমি একজন মন্ত্রী।” তিনি আরো বলেন “এ রকম ঘটনা যদি হয়ে থাকে তাহলে তার প্রমাণ আমার কাছে দিন। তার অভিমত গণমাধ্যমের কর্মীদের মুখের কথার উপর ভিত্তি করে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।” পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রীর এই মন্তব্য থেকে পরিষ্কার আগামী দিনে এই ইস্যুকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতীক তরজা শুরু হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও পিকে-এর মতো ব্যক্তিরা ভারতে জমি রেজিস্ট্রি থেকে মিউটেশন এবং ভবন তৈরির প্ল্যান কি করতে পারেন- সেই প্রশ্নের উত্তর বনমন্ত্রীর দাবি সাথে মিলছে না। কারণ এগুলো করতে প্রয়োজন হয় নাগরিক পরিচয় পত্রের। কিন্তু গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তিদের পরিবার দাবি করছে তারা দুই দেশের নাগরিক। তাদের কাছে দুই দেশের নাগরিক পরিচয় পত্রের একাধিক প্রমাণ আছে। আর তার সবটাই তারা পেয়েছে অর্থের বিনিময়ে।
ইতিমধ্যে ভারত-বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো প্রশ্ন তুলেছে পিকে হালদার, সুকুমার মৃধা-দের সাথে স্থানীয় রাজনীতির যোগ সূত্র ছাড়া কোনও ভাবে এই বিপুল সাম্রাজ্যঃ তৈরি করা সম্ভব নয়। তাহলে পর্দার আড়ালে থাকা সেই ব্যাক্তিরা কারা? পি.কে হালদার এবং সুকুমার মৃধাদের সম্পত্তির চারপাশে থাকা প্রতিবেশীরা বলছেন বাড়িগুলো তৈরি হয়েছে গত পনেরো-কুড়ি বছর আগে । পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের বয়স ১১ বছর পেরিয়েছে সবেমাত্র। তার আগে ছিল বাম শাসন । প্রতিবেশীদের দাবি মানলে বাম শাসনেই পি.কে হালদার ও সুকুমার মৃধাদের সম্পত্তি ক্রয় এবং প্রাসাদের মতন ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যদিও কিছু জমি কেনা এবং বাড়ি তৈরি হয়েছে বর্তমান তৃণমূল আমলে। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাম এবং তৃণমূল শাসন আমলেই পিকে হালদার, সুকুমার মৃধাদের এই বাড়বাড়ন্ত। অর্থাৎ দুই শাসনের শাসক দলের নেতাদের সাথে জড়িত থাকার সম্ভাবনা কোন মতেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
রবিবার পশ্চিমবঙ্গের সল্টলেকের সিজিও কম্প্লেক্স ইডির আঞ্চলিক কার্যালয়ে গ্রেফতারকৃত পিকে হালদার সহ বাকিদের দিনভর ম্যারাথন জেরা করে ইডির কর্মকর্তারা। সূত্রের খবর বাংলাদেশের তরফ থেকে পাঠানো এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে জড়িয়ে থাকা একাধিক নাম পি.কে হালদার-কে দেখানো হয়। জানতে চাওয়া হয় তাদের সম্পর্কে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ভারতের কোথায় কোথায় নামে-বেনামে সম্পত্তি কিনেছে, বাড়ি তৈরি করেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান করেছে তার হদিশ খুঁজতেই জেরা করা হয়। এমনকি এদেশে এই শিকড় গাড়তে কাদের কাদের সাহায্য তারা নিয়েছিল তাদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
এদেশের কাগজপত্র তৈরি জমি কেনা বাড়ি তৈরি এবং বেশ কিছু কারখানা হদিস মিলেছে সেগুলো কখন তৈরি করেছিল কে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সূত্রের খবর, পিকে হালদার এবং তার ভাইয়ের জন্য দুটি আলাদা আলাদা প্রশ্নের সেট তৈরি করেছে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা। একেকটি সেটের ৫০ টি প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছে যেগুলোর উত্তর দিতে হবে পিকে হালদার এবং তার ভাই প্রাণেশ হালদারকে।জানা গেছে এ দিন জেরার মুখে পিকে হালদারসহ সমস্ত ধৃতরা কার্যত ভেঙে পড়েন।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো প্রশ্ন তুলেছে পিকে হালদার সহ বাকিরা কবে দেশে ফিরবে? আদৌ কি বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা ফের দেশে ফিরবে? বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন বাংলাদেশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধৃত পি.কে হালদারসহ বাকিদের প্রাথমিক পর্যায়ে তদন্ত করবে ইডি। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সিবিআইকে এই তদন্তে যুক্ত করা হবে। সেক্ষেত্রে আদালতকে জানাবে ইডি, এরপর আদালতের নির্দেশে সিবিআই- এই তদন্তে যুক্ত হতে পারে। তারপর শুরু হবে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া। অতঃপর বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর যদি দুই দেশের সরকার যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেয় বা আলোচনার টেবিলে বসে যে পিকে হালদার কে তারা তাদের দেশে নিয়ে যাবে সে ক্ষেত্রে ভারত যদি রাজি হয় তবে