অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩ শুরু হতে আর এক সপ্তাহ বাকি। এরই মধ্যে মেলার স্টল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) থেকে মেলার স্টল-প্যাভিলিয়নের মূল কাজ শুরু করতে ৪২৬টি প্রতিষ্ঠানের প্রকাশকদের ৭২৫টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে লটারির মাধ্যমে। এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ৩৪টি, আর স্টল ৬৯১টি। ‘নেতিবাচক’ বা ‘বিতর্কিত’ কনটেন্ট রয়েছে এমন বই মেলায় না তুলতে প্রকাশকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (২২ জানুয়ারি) বিকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার মূল চত্বরে এসব স্টল ও প্যাভিলিয়নের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসময় আয়োজক কমিটি উপস্থিত প্রকাশকদের মেলায় বিতর্কিত, নেতিবাচক কন্টেন্ট আছে এমন বই স্টলে না আনতে অনুরোধ জানান। মেলার প্রথম দিন থেকেই নিয়মের বিষয়ে কোনও রকম নমনীয়তা প্রদর্শন করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি করা হয়।
লটারি শুরুর আগে বাংলা একাডেমির সচিব আবুল হাসান মো. লোকমান বলেন, এবারে বইমেলায় যার স্টল যেখানেই পড়ুক না কেন, কোনও স্টল খারাপ না। সেভাবেই এবার মেলার স্টলগুলো সাজানো হয়েছে। বইমেলা এত বড় একটি কর্মযজ্ঞ। সারাদেশ এদিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুদিন আগে লিট ফেস্ট হয়েছিল আমরা দেখেছি। সেখানে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সেখানে নতুন নতুন মানুষ আসে নতুন নতুন স্টল নেওয়ার জন্য। মানুষের কিন্তু বইমেলা স্টল নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। এবার বইমেলায় অনেক মানুষের সমাগম হবে এটা আমার বিশ্বাস। আমাদের বইমেলার যে নিয়ম নীতিগুলো আছে সেগুলোর প্রতি যদি আমরা সবাই শ্রদ্ধাশীল হই তাহলে কোনও অসুবিধা হবে না।
বই নিয়ে অভিযোগ
আবুল হাসান মো. লোকমান আরও বলেন, আজও কিছুক্ষণ আগে দুটি স্টলের বই সম্পর্কে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। এটা আমার কাছে মেইল করে পাঠিয়েছে। তবে আমি সেগুলোর নাম উল্লেখ করছি না। বিশেষ বিশেষ বইয়ে কিছু কনটেন্ট আছে খুবই নেতিবাচক কনটেন্ট। যদি কারও থাকে আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, তারা বইগুলো এবারে স্টলে উঠাবেন না। বিতর্কিত করে এমন কোনও বই। সহজ কথা হচ্ছে আমরা শুদ্ধচারী জাতি, বাঙালি জাতি। আমরা চাই একটি সুন্দর-সুখময় শান্তির স্বদেশ। আমরা চাই দূষণমুক্ত, মাদকমুক্ত, বাল্যবিবাহ মুক্ত, জঙ্গিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, মিথ্যামুক্ত এবং অন্যায় অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ।
মেলার সদস্য সচিব ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলার নিয়-কানুন নিয়ে এই কমিটি শুরু থেকে কোনও ধরনের নমনীয়তা গ্রহণ করবে না। আপনাদের খারাপ লাগলো-ভালো লাগলো যেটাই মনে করেন না কেন, এ বিষয়টার প্রতি দৃষ্টি রাখবেন। কারণ ছোট্ট যে কোনও একটা ঘটনা থেকে এই ধরনের একটা আয়োজন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রকাশকরা যারা আছেন, যে কোনও প্রয়োজনেই আমার অফিসে এসে যোগাযোগ করবেন। সরাসরি এসে যোগাযোগ করবেন। ফোনে অনেক সময় হয়তো ব্যস্ততার কারণে ধরা হয়ে ওঠে না। তবে অভিযোগ নিয়ে আসবেন না। আর অভিযোগ নিয়ে আসলে সঙ্গে সম্ভাব্য প্রতিকার নিয়ে আসবেন।
স্টলের কাজ শেষ করতে হবে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে
তিনি আরও বলেন, মেলার কাজ শুরু করতে আমাদের একটু দেরি হয়েছিল। কারণ আন্তর্জাতিক একটা মেলা চলছিল। তারপরেও আমরা এই গত ১০ দিনে বেশ ভালোই কাজ করেছি। আমরা আশা করছি আপনারাও হাতে যে ৭-৮ দিন সময় আছে এর মধ্যে আপনাদের স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাজ সম্পন্ন করবেন। ২৯ তারিখ রাত ১২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া আছে। এরপর কিছু কাজ বাকি থাকলে হয়তো ৩০ তারিখ পর্যন্ত আমরা কিছু সময় দিতে পারি। কিন্তু ৩১ তারিখে আমরা আর কোনও বিষয়ে ছাড় দেবো না। মেলা সুন্দরভাবে শুরু করার জন্য আপনাদের সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
পরিচ্ছন্ন-সু্স্থ মেলা আয়োজনের জন্য তিনি স্টল মালিকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, সাইনবোর্ড টানার জন্য মাচা বা যাই তৈরি করেন না কেন সেটা সুন্দরভাবেই নির্দিষ্ট জায়গায় রাখবেন। স্টলের নির্দিষ্ট স্থানে রাখবেন বা ডাম্পিং থাকলে ডাম্পে রাখবেন।রাতে সিটি করপোরেশনের লোক এসে নিয়ে যাবে।
দুটি কারণে এবারে মেলার অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। একটি হলো মেট্রোরেলের অবস্থানগত কারণে। আরেকটি হলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পাশে যেই ৮২টি স্টল ছিল, সেখানে আপনারা কেউই অবস্থান করতে চাননি। আপনাদের আবেদনের কারণেই সেখান থেকে সরিয়ে এনে মেলার স্টল পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।